মোঃ রবিউল ইসলাম, চুয়াডাঙ্গা থেকে
চুয়াডাঙ্গা জেলা সদর হাসপাতালে যেখানে বহির্বিভাগ থেকে শুরু করে হাসপাতালের প্রতিটি বেড, ফ্লোর, এমনকি ওয়ার্ডের বারান্দাতে রোগীর উপস্থিতিতে ঠাসাঠাসি থাকত, সেখানে এখন ফাঁকা পড়ে আছে বিছানা। করোনাভাইরাস আতঙ্কে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের স্বাভাবিক সময়ের ঠিক উল্টো চিত্র দেখা গেছে। গত এপ্রিল মাসে এক দিনও দেখা যায়নি হাসপাতালের চিরচেনা চিত্র। পুরো এপ্রিল মাসজুড়ে হাসপাতালের নয়টি ওয়ার্ডে ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিয়েছে মাত্র ১ হাজার ৩৫৯ জন। গড় হিসেবে প্রতিদিন হাসপাতালে ভর্তি থেকেছে ৪০ থেকে ৪৫ জন রোগী। বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে ১ হাজার ২৬০ জন পুরুষ, ১ হাজার ৫০ জন নারী, ৭৫০ জন শিশুসহ মোট ৩ হাজার ৬০ জন। গড়ে বহির্বিভাগে প্রতিদিন চিকিৎসা নিয়েছে ৯০ থেকে ১১০ জন রোগী। জানা যায়, চুয়াডাঙ্গায় ১৬ মার্চ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত সন্দেহে এক রোগীর আইসোলেশনে রাখার খবর ছড়িয়ে পরার পর থেকে সদর হাসপাতালে রোগী আসা কমতে শুরু করে। পরে ১৯ মার্চ আইসোলেসনে চিকিৎসাধীন থাকা ওই ব্যক্তির রোগীর শরীরে করোনা নিশ্চিত করে ঢাকা আইইডিসিআর। এর পর থেকে বহির্বিভাগ ও আন্তবিভাগ কোনোটিতেই আর রোগীর ভিড় দেখা যায়নি। শূন্য পড়ে থাকতে দেখা গেছে ওয়ার্ডের অধিকাংশ শয্যা। করোনা মহামারির ভয় ও আতঙ্কে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতালগুলোতেও চিকিৎসা নিতে আসা থেকে বিরত থাকছেন রোগীরা। অন্য সময়ে যেখানে ১ শ শয্যার হাসপাতালটি প্রতিদিন আড়াই শ থেকে তিন শ ভর্তি রোগীতে ঠাসাঠাসি থাকত। বহির্বিভাগে প্রতিদিন ছয় শ থেকে আট শ রোগীকে সেবা দিতে হত এখানে কর্মরত চিকিৎসক-নার্সদের। সেখানে গতকাল শনিবার (২ মে) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাত্র ২৩ জন রোগী বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা নিতে ভর্তি হয়েছেন। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছে মাত্র ৯৩ জন নারী, পুরুষ ও শিশু। ফলে প্রায় রোগী শূন্য হাসপাতালে চিকিৎসক ও নার্সরা অলস সময় কাটাচ্ছেন। এ হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, স্বেচ্ছাসেবী-স্বাস্থ্যকর্মীরা পারসোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (পিপিই) পোশাক পরছেন। বাকিরা রয়েছেন সাধারণ পোশাকেই। তবে শঙ্কা কাজ করছে রোগী, নার্স ও চিকিৎসক সবার মনেই।
হাসপাতালে সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন মসলেম উদ্দীন। তাঁর সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, করোনা আতঙ্কে রয়েছেন তাঁরাও। এক প্রকার নিরুপায় হয়েই হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন। এর আগেও চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে এসেছেন তিনি। এমন নীরব পরিবেশ কখনো দেখেননি আগে। তবে, হাসপাতালে চিকিৎসকেরা আন্তরিকভাবেই চিকিৎসা দিচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. শামীম কবির জানান, সদর হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে করোনা আক্রান্ত একজন রোগী ভর্তি করার পর থেকেই রোগীর সংখ্যা কমে গেছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ হাসপাতালে রোগী নিয়ে আসছেন না। সর্দি, জ্বর ও কাঁশি হওয়া রোগীদের হাসপাতালের নতুন ভবনে ফ্লু কর্নার স্থাপন করে চিকিৎসকেরা চিকিৎসা দিচ্ছেন। অনেকেই বাড়িতে বসে মোবাইল ফোনে চিকিৎসকদের পরামর্শ নিচ্ছেন। এদিকে, করোনা আক্রান্ত আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি হওয়া ওই যুবকের ৩১ মার্চ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। এর পর এপ্রিল মাসের শেষে ২৯ এপ্রিল করোনা আক্রান্ত অন্য এক রোগীকে আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি রাখা হয়েছে। তিনি এখন সেখানে চিকিৎসাধিন রয়েছেন। তাঁর শরীরে করোনার কোনো উপসর্গ নেই। খুব শিগগিরই তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরবেন বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. এ এস এম মারুফ হাসান বলেন, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের প্রভাব পড়েছে চুয়াডাঙ্গা হাসপাতালে। রোগী ভর্তি এবং বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা মানুষের সংখ্যা কমেছে কয়েকগুণ, ভিড় নেই একেবারেই। তবে ডাক্তার ও নার্সরা সর্বদা সতর্কাবস্থায় থেকে তাঁদের কর্তব্য পালন করে চলেছে।